শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৮ অপরাহ্ন

আপডেট
ময়মনসিংহে ৮শ ক্লিনিক ডায়াগোনস্টিকের ৭শই অনুমোদনহীন ভাবে চলছে!

ময়মনসিংহে ৮শ ক্লিনিক ডায়াগোনস্টিকের ৭শই অনুমোদনহীন ভাবে চলছে!

নিজস্ব সংবাদদাতা : ভেঙ্গে পড়েছে বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহের ক্লিনিক, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার এবং প্রাইভেট হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। শিক্ষার নগরী এখন ক্লিনিকের জনপথ। জেলার আটশো ক্লিনিক, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার এবং প্রাইভেট হাসপাতালের সাতশই চলছে অনুমোদনহীন ভাবে। এসব প্রতিষ্ঠানে রোগি আনা থেকে শুরু করে অস্ত্রোপচার সবকিছুতেই দালাল সিন্ডিকেট জড়িত। এতে দীর্ঘমেয়াদে রোগে ভোগা থেকে শুরু করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন কেউ কেউ।

ময়মনসিংহ নগরীর কৃষ্টপুর এলাকায় বহুতল ভবনের প্রথম এবং দ্বিতীয় তলায় শাওন ডায়াগনোস্টিক ল্যাব। সেখানে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হলেও এই ল্যাবে আসা রোগিদের অপারেশন করা হয় তৃতীয় তলায় প্রতিষ্ঠিত নিউ মনির উদ্দিন প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে। সম্প্রতি গৌরীপুর উপজেলার এক সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা প্রতিবন্ধী নারীকে পরীক্ষা-নীরিক্ষার কথা বলে শাওন ডায়াগনোস্টিক ল্যাবে নিয়ে আসেন দালাল মাছুম সাইফুল্লাহ। পরে তিনি নিজেই ওই প্রতিবন্ধী নারীর হাত পা বেঁধে এভয়েশন করেন নিউ মনির উদ্দিন প্রাইভেট হাসপাতালে।

ভুক্তভোগি ওই নারী বলেন, প্রতিবেশী খায়রুল ইসলাম আমাকে ফুসলিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। তারপর পেটে বাচ্চা আসে। একদিন বেড়ানোর কথা বলে ময়মনসিংহ শহরে নিয়ে যায় সে। পরে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে দালাল মাছুম সাইফুল্লাহ জোর করে আমার হাত পা বেঁধে বাচ্চা নষ্ট করেছে। আমার পেট এখন খুব ব্যাথা করে।
খায়রুল এভিয়েশন করার জন্য ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ছিল।

বিষয়টি বাড়িতে জানালে তারা কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি অভিযোগ করে। পরে পুলিশ মাছুম সাইফুল্লাহকে জিজ্ঞেসাবাদ শেষে প্রমাণ না থাকায় ছেড়ে দেয়।

শাওন ডায়াগনোস্টিক ল্যাবের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওই নারীকে নিয়ে একজন আমার ল্যাবে আসছিল পরীক্ষা করানোর জন্য। পরে পরীক্ষা করিয়ে চলে যায়। এরপর কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। কিছু হয়ে থাকলে নিউ মনির উদ্দিন প্রাইভেট হাসপাতালে হয়ে থাকতে পারে।

নিউ মনির উদ্দিন প্রাইভেট হাসপাতালে পরিচালক মো.রিপন বলেন, মাছুম সাইফুল্লাহ আমাদের পরিচিত। মাঝে মধ্যে সে রোগি নিয়ে আসে। তবে প্রতিবন্ধী কাউকে আমাদের এখানে অপারেশন করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে পুলিশও তদন্তে আসছিল।

তবে প্রতিবন্ধী নারীকে অস্ত্রোপচার করে অনুতপ্ত দালাল মাছুম সাইফুল্লাহ বলেন, অভিজ্ঞতার আলোকেই আমি দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্রোপচার করছি। এক্ষেত্রে শাওন ডায়াগনোস্টিক ল্যাব এবং নিউ মনির উদ্দিন প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের কর্তৃপক্ষ আমাকে সহযোগিতা করে। তবে ওই প্রতিবন্ধী নারীকে অপারেশনের পর রাতে ঘুমাতে পারছি না। নিজেকে নিজের কাছ খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।

বছর খানেক আগে ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া এলাকার একটি গলিতে অনুমোদন ছাড়াই গড়ে তোলা হয় গাজি প্রাইভেট হাসপাতাল। স্থানীয়দের অভিযোগ এই হাসপাতালটিতে প্রায় সময় রোগি ও তাদের স্বজনরা হয়রানীর শিকার হয়। সেখানে গেলেও অনুমোদনের কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এই হাসপাতালটির মতো জেলার বেশির ভাগ ক্লিনিক, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার অনুমোদনহীন ভাবে চলছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক হোসেন বলেন, শুধু গাজি হাসপাতাল নয় নগরীতে অনেক বেসরকারী ক্লিনিক ডায়াগোনস্টিক সেন্টার অনুমোদনহীন ভাবে চলছে। তারা সেবার নামে মানুষের রক্ত চোষে খাচ্ছে। গত কয়েকদিন আগে গাজি হাসপাতালে এক রোগির সাথে দেনা পাওনা নিয়ে অসদাচরণ করা হয়। একটি হাসপাতালে যা যা সুযোগ সুবিধা থাকা দরকার কিছুই নেই তাদের। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তারা চালাচ্ছে।

গাজি হাসপাতালের ম্যানেজার মাকসুদুর রহমান বলেন, আমরা এক বছর হয় হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করেছি। অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। তবে আমরা কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি। সাধ্য অনুযায়ী সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

জেলা জনউদ্যোগ এর আহবায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, শিক্ষার নগরী এখন ক্লিনিকের নগরীতে পরিণত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সেবার পরিবর্তে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই যেনো মূখ্য উদ্দেশ্য। এসব অব্যবস্থাপনা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রশাসনের নজরদারী বাড়ানো প্রয়োজন।

ময়মনসিংহ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টার অনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা.হরিশংকর দাশ বলেন, নগরীতে যত্রতত্র ভাবে গড়ে ওঠা ক্লিনিক ডায়াগনোস্টিকের সংখ্যাই বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানে গণগণ আমাদের নিয়ে অভিযান পরিচালনার জন্য সিভিল সার্জনকে বলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। দালাল সিন্ডিকেটে ভরপুর এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ হয়রানীর শিকার হচ্ছে। কিছুদিন আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে ময়মনসিংহে বেশকিছু ক্লিনিক, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার সিলগালার কিছুদিন পর পুনরায় খোলে দেওয়া দু:খজনক।

অচিরেই অনুমোদনহীন ক্লিনিক ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থার নেয়ার কথা জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা.নজরুল ইসলাম বলেন, জেলায় আটশ ক্লিনিক, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার এবং প্রাইভেট হাসপাতাল রয়েছে। এরমধ্যে সাতশ অনুমোদনহীন। সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে ২৯টি ক্লিনিক ডায়াগনোস্টিক সেন্টার সিলগালা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকে শর্ত পূরণ করায় খোলে দেয়া হয়েছে। পাঁচটি এখনো বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন সময় রোগি এবং তাদের স্বজনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা ব্যবস্থাও নিয়ে থাকি।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |